MMonir Trainer 2 years ago |
এক মহিলা সাহাবী ছিলেন খুবই
সুন্দরী। আল্লাহ তা’আলা তাঁকে
আজব
সৌন্দর্য দান করেছিলেন। তাঁর
বিবাহও
হয়েছিল এক বিরাট ধনাঢ্য সাহাবীর সঙ্গে।
স্বামির সংসারে ঐ মহিলা
সাহাবীর
কোনো অভাব ছিল না। স্বামী-
স্ত্রীর মাঝেও
প্রগাঢ় ভালবাসা ও সুসম্পর্ক ছিল তাঁর
জীবন বেশ সুখেই কাটছিল। রূপে-
গুণে
অন্যন্যা হয়েও তিনি মনে-
প্রাণে স্বাম্মীর
সেবা করতেন এবং স্বামীকে সদা খুশি
রাখতেন। সব মিলিয়ে তাদের
দাম্পত্যজীবন ছিল মধুময়। এক
রাতের ঘটনা। তাঁর স্বামী
পানি পান করতে চাইলেন।
তিনি পানি এনে দেখলেন, স্বামী ঘুমিয়ে
পড়েছেন। তিনি
স্বামীর শিয়রে
পানির পাত্র হাতে নিয়ে
দাঁড়িয়ে থাকলেন।
স্বামী তাঁর এহেন আন্তরিকতায়
খুবই মুগ্ধ ও প্রীতি হলেন। তিনি উঠে
পানি পান করলেন। স্ত্রীর
ভালবাসায় স্বামী এতটাই
প্রসন্ন হলেন যে, আনন্দিত কণ্ঠে
বললেন,
তুমি আমার জন্য পানি নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে
পতিভক্তির এক অনন্য দৃষ্টান্ত
স্থাপন
করেছ। আমি তোমার প্রতি খুব
খুশী। আজ
তুমি আমার কাছে যা চাইবে, আমি তোমাকে তা-ই
দেব।
স্ত্রী বললেন, সত্যিই কী আমি
যা চাইব,
আপনি আমাকে তা-ই দেবেন?
স্বামী জবাবে বললেন, অবশ্যই!
আজ তোমার যে কোনো চাওয়া আমি পূরণ করব।
কী
চাও
বলো। স্ত্রী বললেন, আমি শুধু
একটি বিষয়
চাই। আর তা হলো, আপনি আমাকে
তালাক দিয়ে দিন। স্ত্রীর এ কথায় স্বামী
তাজ্জব বনে গেলেন। তাঁর এত
সুন্দরী, গুণী, হিতাকামী ও
আন্তরিক সেবাকারী স্ত্রী তাঁর
কাছে তালাক চাচ্ছে! তিনি
প্রথমত হতভম্ব হয়ে গেলেন। পরে
স্বাভাবিক হয়ে
অপ্রত্যাশিতভাবে তালাক
চাওয়ার কারণ
জানতে চাইলেন।
স্বামীঃ আমি তোমাকে কোনো কষ্ট
দিয়েছি কি?
স্ত্রীঃ মোটে ও না।
স্বামীঃ আমি কী তোমার
মর্যাদা ক্ষুণ্ন
করেছি? স্ত্রীঃ কখনো নয়।
স্বামীঃ তবে কী তোমার আশাভঙ্গ করেছি?
স্ত্রীঃ না, তাও করেননি।
স্বামীঃ তবে কি তুমি আমার
প্রতি রুষ্ট। স্ত্রীঃ কখনো নয়।
স্বামীঃ তাহলে তালাক চাচ্ছ
কেন? আমাকে
বুঝি তোমার পছন্দ হয় না?
স্ত্রীঃ ব্যাপারটা আদৌ এমন
নয়। আমি আপনাকে পছন্দ করি। মহব্বত
করি বলেই
তো খেদমত করি। আপনি কথা
দিয়েছিলেন, যা চাইব, তা-ই
দিবেন। এখন দিন, তালাক দিয়ে
আমাকে বিদায় করে দিন। লোকটির বিস্ময় যায় না।
চিন্তা করলেন, কথা দিয়েছি,
এখন কী করব। হঠাৎ বলে
উঠলেন, আচ্ছা! রাতটা পোহাক।
নবীজির দরবারে গিয়ে তাঁকে
সব খুলে বলব। তিনি যে
সিদ্ধান্ত দেন, সে অনুযায়ী কাজ
করব।
স্ত্রী তাঁর এ কথায় সম্মতি দিয়ে
বলল, ঠিক
আছে; তা-ই হবে। তারপর স্বামী স্ত্রী
ঘুমিয়ে পড়লেন।
রাত পোহাল। স্ত্রী বলল চলুন;
নবীজির
কাছে যাই। স্বামী-স্ত্রী
প্রস্তুতি নিয়ে ঘর থেকে বের হলেন। হঠাৎ
স্বামীর
পা কিছু
একটার সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়ায়
তিনি পড়ে
গেলেন। আহত জায়গা থেকে রক্ত বের হতে
লাগল। স্ত্রী তৎক্ষণাৎ উড়না
ছিড়ে
স্বামীর ক্ষতস্থান বেঁধে দিল
এবং স্বামীকে
নিজের শরীরের সঙ্গে ভর দিয়ে রেখে
বলল,
চলুন ঘরে ফিরে যাই। আমার আর
তালাকের
প্রয়োজন নেই। স্বামী এতে
অবাক হয়ে
বললেন, তুমি কেনইবা তালাক চাইলে, এখনবা
কেন বলছ, আর তালাক চাই না
কিছুই বুঝলাম
না। ব্যাপারটা খুলে বলো তো!
স্ত্রী বলল, আগে ঘরে চলুন।
সেখানে গিয়ে সব খুলে বলব। তারা ঘরে গিয়ে
বসল। স্বামী
বলল, এবার বলো তোমার ঘটনা
কি? স্ত্রী
বলল, আপনি কিছুদিন পূর্বে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের একটি
হাদীস আমাকে শুনিয়েছিলেন
যে, আল্লাহ যে
বান্দাকে ভালবাসেন, তাঁর
প্রতি বিভিন্ন বালা-মুসিবত এভাবে ছুটে
আসে, যেমন উপর
থেকে আসা পানির নীচের
দিকে গড়ায়। যখন
থেকে আমি নবীজির এই
হাদীসখানা শুনেছি, তখন থেকে মনে-মনে ভাবি
যে,
আমি তো
আপনার সংসারে এসে কোনো
পেরেশানি
দেখি না, কোনো দুঃখ-ভাবনা
দেখি না, বিপদ-মুসিবত দেখি না। এতে
আমার অন্তরে
এই খেয়াল জাগল যে, হয়তবা
আমার স্বামীর
ঈমান দুর্বল, আমার স্বামীর আমল
খারাপ। তাই আমার স্বামীর প্রতি
আল্লাহ নারাজ।
যদি আল্লাহ আমার স্বামীকে
ভাল না বাসেন,
তবে আমি তাঁর খেদমত করতে যাব
কেন? এ কারণে যখন আপনি আমাকে
বলেছেন, আমি
তোমার চাওয়া পূর্ণ করব; বলো
তুমি কী
চাও, তখন আমি বলেছি,
আপনাকে যেহেতু আমার আল্লাহ ভালবাসেন না,
তাই আপনি
আমাকে তালাক দিয়ে দিন।
কিন্তু আজ যখন আমরা নবীজির
খেদমতে
ইলম অর্জন করার জন্য যাত্রা করি,
তখন
ঘটনাক্রমে আপনি পড়ে গেলেন
এবং আপনার
শরীর আহত হয়ে রক্ত বেরোল।
এতে আমি বুঝে ফেলি, আল্লাহর রাস্তায়
আপনি ব্যথা
পেয়েছেন, আপনার উপর বিপদ
এসেছে। যার
দ্বারা প্রমাণিত হয়, আল্লাহ
অবশ্যই আপনাকে ভালোবাসেন। ফলে
এখন আমার
তালাক নেওয়ার আর কোনো
প্রয়োজন
নেই। আজ থেকে আমি আপনার
সারা জীবনের দাসী হয়ে গেলাম।
আমৃত্যু হৃদয়-মন
দিয়ে আমি আপনার সেবা করে
যাবো ইন-শা-আল্লাহ....
Alert message goes here