MMonir Trainer 2 years ago |
তাকদীর এবং আমার করণীয়!
"সবকিছু যদি আগে থেকেই তাকদীরে লেখা থাকে, তাহলে আমার আর দুয়া করে কি লাভ? আর কোন কাজের চেষ্টা করারই কি দরকার?"
এটা হলো শয়তানের ক্লাসিক চক্রান্ত! শয়তান খুব খুব পছন্দ করে যখন বান্দা এই ফাঁদে পড়ে আল্লাহকে ভুলে যায়।
বান্দা তখন দুয়া করা থামিয়ে দেয়, এবং নেক কাজের ব্যাপারে অলস হয়ে পড়ে।
আর ঐ দিকে শয়তানের জয়জয়কার!
এর সমাধান কি?
অবশ্যই সবকিছুই তাকদীরে লেখা আছে।
এবং তাকদীরে হয়তো এটাই লেখা আছে যে, তোমার জীবনে যা কিছু ভালো, কল্যাণকর, এবং সাফল্য আসবে, সেটা দুয়া এবং নেক কাজ করার মাধ্যমেই আসবে!
তাকদীরে হয়তো এটাই লেখা আছে, বান্দা যত নেক কাজের জন্য পরিশ্রম করবে, তত তার জীবনে বরকত আসবে।
তাকদীরে হয়তো এটাই লেখা আছে, বান্দা যত পরিস্কার অন্তর নিয়ে আল্লাহর কাছে দুয়া করে যাবে, আল্লাহ ততই অকল্পনীয়ভাবে তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিবে দুনিয়াতে এবং আখিরাতে!
উটের দড়িটাও বাঁধতে থাকা এবং আল্লাহর উপর দৃঢ় তাওয়াক্কুল নিয়ে ভরসা করে যাওয়া―এই তো বিশ্বাসীর জীবনের ভারসাম্য!
এখন গোঁ ধরে থাকা বান্দা নেক কাজ বন্ধ করে দিবে, দুয়া করা বন্ধ করে দিবে, এবং মুখ ফুলিয়ে অভিযোগ করবে, "আল্লাহ কেন আমাকে হিদায়েত দিচ্ছেন না, তিনি তো চাইলেই পারেন?"
তাহলে ব্যাপারটা কি হলো?
আরে মানুষ! হিদায়েত আল্লাহর কাছে তো চাইতে হবে!!
অন্তর পরিষ্কার করে চেয়েই দেখুন, সৃষ্টিকর্তা আপনার জন্য কত কল্যাণ ও বরকত রেখেছেন!
আল্লাহ ওয়াদা করেছেন, যখন কোন আহ্বানকারী আল্লাহকে ডাকে, আল্লাহ তার খুব কাছেই থাকেন সাড়া দেয়ার জন্য। এমন কত নওমুসলিমদের গল্প আমরা শুনেছি যে, রাতের অন্ধকারে এক মনে শুধু আল্লাহর কাছে সত্য হেদায়েত চেয়েছে এবং আল্লাহ অকল্পনীয় ভাবে তার জীবনটা গুছিয়ে দিয়েছেন?
কিন্তু যার অন্তরে বক্রতা থাকে, এবং অহংকারের জায়গা থেকে পিপিলিকার থেকেও ছোট এই বান্দা যখন মহা পরাক্রমশীল রবের জন্য অলমোস্ট একটা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছে, "দেখিনা আমার অহংকার নিয়ে গোঁ ধরে বসে থাকলে হিদায়াত আকাশ থেকে টপকে পড়ে কিনা?!"
তাহলে এমন বান্দা কীভাবে হিদায়েত পাবে আপনারাই বলুন?
নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবহানাতা'য়ালা ন্যায় বিচারক আল হাকাম, আল আদল!
সীমিত পরিমাণে আল্লাহ মানুষদেরকে স্বাধীন ইচ্ছা-শক্তি দিয়েছেন, ভালো মন্দ নির্ধারণের যেন আল্লাহ আমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন।
তবে মানুষ তার ইচ্ছাটাও আল্লাহর হুকুমের বাইরে গিয়ে করতে পারে না। তার মানে কি আমি সব দায়মুক্ত?
কখনোই না, কারণ ...
মানুষ যদি ভালো নিয়ত করে, হিদায়েত চায়, আল্লাহ তাকে সেই নিয়ত অনুযায়ী নেক আমলের পথ সহজ করে দিবেন। আর, মানুষ যদি খারাপ ইচ্ছা করে, হিদায়েত না চায়, অহংকার এবং অ্যারোগেন্স শো করে, তাহলে সে তার বদ নিয়ত অনুযায়ী ফলাফল পাবে।
এবং সবাই যে যার যার জায়গা থেকে কর্ম এবং ইচ্ছা অনুযায়ী ফলাফল পাবে, সেটা তো আল্লাহ আমাদেরকে শত শত বছর আগেই জানিয়ে দিয়েছেন।
এটা তো খুব সিম্পল একটা সমীকরণ। এখানে পানি ঘোলা করার কিছু নেই।
কখনোই এই নিয়ে চিন্তার জগত ঘোলাটে করতে দিবেন না, শয়তান আপনাকে ভয়ংকর ফাঁদে জড়িয়ে ফেলবে।
একটা বিষয় খেয়াল করুন, আমরা মানুষেরা সময়ের মাত্রা দিয়ে সীমাবদ্ধ। আমাদের কাছে সময় বলতে কেবল অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ।
এবং আমরা অতীত পরিবর্তন করতে পারি না এবং ভবিষ্যতে কি আছে সেটা দেখতে পারি না!
অর্থাৎ, আমরা অনেক অনেক লিমিটেড।
অথচ আল্লাহ রব্বুল আলামীন সময়ের ব্যাপারে একেবারেই সীমাবদ্ধ নন!
তিনি অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ সব জানেন। দুনিয়াতে বান্দার কোন কাজের ফলাফল আখিরাতে কীভাবে প্রকাশ পাবে, সবকিছুর খবর রাখেন!
আমরা কিন্তু সময় দিয়ে সীমাবদ্ধ, স্থান, কাল, পাত্র দিয়ে সীমাবদ্ধ!
আমাদের চোখ আলোক রশ্মির একটা নির্দিষ্ট স্পেক্ট্রাম এর বাইরে কিছুই দেখতে পারে না, আমরা পৃথিবীর ডাইমেনশন দিয়ে সীমাবদ্ধ―অথচ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এগুলোর কোন ব্যাপারেই সীমাবদ্ধ নন। সময়, তাকদীর এবং অবস্থানের অধিপতি একমাত্র আল্লাহর!!
তাই একটা পর্যায়ে এসে তাকদীরের এই আলোচনায় আমাদেরকে সিজদায় পড়ে গিয়ে আত্মসমর্পণ করতেই হবে যিনি সিজদার যোগ্য তার সামনে!
আমার উস্তাদা আমাকে একটা চমৎকার বিষয় শিখিয়েছেন।
তিনি বলতেন, "কদরের ব্যাপারে সবচেয়ে সুন্দরভাবে বোঝার উপায় হচ্ছে, সবার আগে আত্মসমর্পণ করে নেওয়া যে, আমি কোনদিনও আল্লাহকে শতভাগ বুঝে উঠতে পারবো না and it's completely okay!"
যে বান্দা নিজেই সীমাবদ্ধ, সে কীভাবে সীমাহীন অসীম রবকে বুঝে উঠতে পারবে?
এবং এজন্যই "ইসলাম" এর মূল অর্থটাই আত্মসমর্পণ।
ইসলাম অর্থ কিন্তু শান্তি না, যেটা আমরা ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি। সালাম অর্থ শান্তি আর ইসলামের প্রকৃত অর্থ আত্মসমর্পণ।
যদিও ইসলাম এবং সালাম দুটোই একই আরবি ধাতু মূল থেকে এসেছে।
একই ধাতুমূল থেকে আসার জন্য এই দুই শব্দের মধ্যে গভীর কানেকশন আছে।
সালাম অর্থ শান্তি এবং ইসলাম অর্থ আত্মসমর্পণ―অর্থাৎ প্রকৃত অন্তরের শান্তি একমাত্র পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ এর মাধ্যমেই পাওয়া সম্ভব!
তাই আল্লাহর কদরের কাছে আত্মসমর্পণ করুন!
আল্লাহর ক্ষমতার কাছে আত্মসমর্পণ করুন!
আল্লাহর সিদ্ধান্তের কাছে আত্মসমর্পণ করুন!
তারপর দেখুন কিভাবে প্রশান্তি আপনার পিছে পিছে ঘুরবে ...
.
©️ শারিন সফি অদ্রিতা
Alert message goes here