লাল-চুলো সংঘ
[ দ্য রেড হেডেড লিগ ]
গত বছর শার্লক হোমসের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম শরৎকালে। লাল-চুলো মোটাসোটা এক ভদ্রলোকের সঙ্গে কথা বলছিল হোমস। শুধু লালই নয়। আগুনের মতোই জ্বলজ্বলে চুলের বাহার দেখবার মতো। হঠাৎ ঢুকে পড়ার জন্যে ক্ষমা চেয়ে বেরিয়ে আসতে যাচ্ছি, হোমস আমাকে টেনে নিয়ে গেল ভেতরে।
বললাম, 'পাশের ঘরে বসি?'
'না। মি. উইলসন, ডক্টর ওয়াটসন আমার সহযোগী। একে দিয়ে আপনারও কাজ হবে। ভদ্রলোকের চর্বি-ঘেরা কুতকুতে চোখে কৌতুহলের রোশনাই দেখা গেল।
হোমস বসল। বলল, “আমার কাজকারবারে তোমার উৎসাহ কম নয়। আমাকে নিয়ে অনেক কাহিনিও লিখেছ— যদিও তা অতিরঞ্জন-দুষ্ট। এর আগেও তোমাকে বলেছি, কল্পনা দিয়ে রাঙানো ঘটনা কখনোই বাস্তব ঘটনার মতো চাঞ্চল্যকর হতে পারে না।'
তাতে আমার সন্দেহ আছে।'
"তাহলে আরও উদাহরণ হাজির করা যাক। মি. জাবেজ উইলসন একটা অসাধারণ কেস এনেছেন আজ। এর আগেও তোমাকে বলেছি, খুব অদ্ভুত আর অসাধারণ ঘটনার পেছনে বড়ো অপরাধ নাও থাকতে পারে-
থাকে কিন্তু এমন ব্যাপারের পেছনে যা চোখ এড়িয়ে যায় অতি সহজেই। এই যে কেসটা এখন শুনছি, এর মধ্যে অপরাধের ছায়াটুকুও দেখছি না। তা সত্ত্বেও বলব ইদানীংকালের মধ্যে এমন বিচিত্র মামলা আর হাতে আসেনি। মি. উইলসন, আপনার আশ্চর্য কেসটা আবার গোড়া থেকে বলুন। ডক্টর ওয়াটসনের শোনা দরকার।'
লম্বা কোটের পকেট থেকে একটা নোংরা দলা পাকানো খবরের কাগজ বার করে বিজ্ঞাপনের স্তম্ভ দেখতে লাগলেন মি. উইলসন। ভদ্রলোক একটা ঢিলেঢালা টাইপের। পোশাক পরিচ্ছদও তাই। কারবারি ইংরেজের চেহারা যেরকম হয় আর কি। ওয়েস্টকোটে ঝুলছে তামার অ্যালবার্ট চেন”, তাতে লাগানো একটা চৌকোনা ধাতু। চেহারার মধ্যে একমাত্র বৈশিষ্ট্য তাঁর আগুন-রাঙা লাল চুল, ভাবভঙ্গি বেশ অশান্ত ।
দেখলাম, আমার মতো শার্লক হোমসও বিশ্লেষণী দৃষ্টি বুলিয়ে নিচ্ছে ভদ্রলোকের সর্বাঙ্গে। চোখাচোখি হতেই হাসল।
কাজও করেছেন, চীনদেশে ছিলেন এবং এখন খুব লেখালেখি নিয়ে
আছেন।
দারুণ চমকে উঠলেন জাবেজ উইলসন। কাগজে তর্জনী রেখে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলেন হোমসের পানে। বললেন, 'আশ্চর্য। আপনি জানলেন কী করে? সত্যিই তো মজুর
হিসেবেই আমার কর্মজীবনের শুরু। জাহাজের ছুতোর মিস্ত্রি ছিলাম।
"আপনার হাত দেখে জানলাম। ডান হাতটা বা-হাতের চেয়ে বেশি মাংসল কাজের হাত কিনা।'
'নস্যি নিই জানলেন কী করে? অথবা রাজমিস্ত্রি ছিলাম ? 'আপনার ব্রেস্টপিন দেখে জানলাম আপনি রাজমিস্ত্রি ছিলেন। নস্যির ব্যাপারটা বলে আপনার বুদ্ধিকে খাটো করতে চাই না।' 'লেখা নিয়ে আছি বুঝলেন কীভাবে?
*আপনার ডান হাতার তলার পাঁচ ইঞ্চি বেশ চকচক করছে। আর বাঁ-হাতার কনুইটা কালচে মেরে গেছে টেবিলে ভর দিয়ে থাকার দরুন।' 'চীনদেশে থাকাটা ?"
“ডান কবজিতে একটা উল্কি আঁকিয়েছেন। মাছের টায়। আঁশটা গোলাপি। এ কাজ চীন দেশেই হয়। উল্কি নিয়ে আমি একটু কাজ করেছি, প্রবন্ধও লিখেছি। তাছাড়া ঘড়ির চেনের ওই চীনে মুদ্রাটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় আপনি চীন ঘুরে এসেছেন।
অট্টহেসে জাবেজ উইলসন বললেন, “ওঃ, এই ব্যাপার! আমি
ভাবলাম না-জানি কী অসাধারণ ক্ষমতাই দেখাচ্ছেন।'
"অত খুলে না-বললেই ভালো হত দেখছি— সুনামটা আর রইল না— পেয়েছেন বিজ্ঞাপনটা ?" 'হ্যাঁ, এই দেখুন। যত গণ্ডগোল এই বিজ্ঞাপন থেকেই। ডক্টর
ওয়াটসন, পড়ন আপনি। আমি পড়লাম
যুক্তরাষ্ট্রের স্বর্গত হপকিন্সের ইচ্ছাপত্র অনুযায়ী লাল-চুলো সংঘে আর একটা সদস্য-পদ শূন্য হয়েছে। সামান্য কাজের বিনিময়ে হস্তায় চার পাউন্ড মাইনে দেওয়া হবে। বয়স যার একুশের বেশি, চুলের রং লাল, তিনি আবেদনপত্র নিয়ে বেলা এগারোটায়, ফ্রিট স্ট্রিটের সাত নম্বর পোপস কোর্টে সংঘ-দপ্তরে ডানকান রসের সঙ্গে দেখা করুন।'
হতভম্ব হয়ে বললাম, “এ আবার কী বিজ্ঞাপন!' জোরে হেসে উঠল হোমস। বলল, তাহলেই দেখ ব্যাপারটা মামুলি নয় মোটেই। মি. উইলসন, এবার আপনার আর্থিক অবস্থাটা খুলে বলুন। ওয়াটসন, কাগজটার নাম তারিখ লিখে রাখো।'
“মর্নিং ক্রনিকল"। তারিখটা দেখছি দু-মাস আগেকার - ২৭ এপ্রিল,
১৮৯০।
'বলুন মি. উইলসন। 'আমার একটা বন্ধকি কারবার আছে। ছোটো কারবার। কর্মচারী মাত্র একজন— তাও হাফ মাইনের— তা না হলে রাখতে পারতাম না।'
'নাম ?
ভিনসেন্ট স্পলডিং। বয়স খুব কম নয়, তেমন ধড়িবাজও নয়— নইলে এই মাইনেতে পড়ে থাকে? দোষের মধ্যে ফটো তোলার বাই আছে। দিনরাত ক্যামেরা কাঁধে টো-টো করছে, ছবি তুলছে। নীচের অন্ধকার ঘরে ডেভলাপ করছে।
'এখনও কাজ করছে আপনার ?
"তা করছে। সেইসঙ্গে একটা মেয়েও আছে। বছর চোদ্দো বয়স। সংসারের কাজ করে।
কারণ আমি বিপত্নীক। বেশ ছিলাম এই তিনজনে কিন্তু মাস দুয়েক আগে এই বিজ্ঞাপনটা এনে স্পলডিং বললে- আহারে, আমার যদি লাল চুল থাকত!
"অবাক হয়ে জানতে চাইলাম ব্যাপারটা কী। ও তখন বিজ্ঞাপনটা দেখাল। বললে, লাল-চুলো লোকের আকাল পড়েছে বলেই নিশ্চয় বিজ্ঞাপন দিয়েছে অছিরা। চুলের রংটা পালটে নিতে পারলে সে নিজেই যেত। বছরে দু-শো পাউন্ড কি চাট্টিখানি কথা? অথচ আমার চুল টকটকে লাল হওয়া
সত্ত্বেও ঘর থেকে নড়ছি না। কিছুদিন ধরে কারবার ভালো চলছিল না। লাল চুলের দৌলতে দু- শো পাউন্ড রোজগারের খবর শুনে তাই লোভ হল।"
‘বললাম, “ঝেড়ে কাশো, কী বলতে চাও?”
*ও তখন এই বিজ্ঞাপনটা দেখাল। বললে, 'তার চাইতে আপনি নিজেই পড়ে দেখুন। একজন লাল-চুলো আমেরিকান কোটিপত্তি একটা সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন। এই সেই লাল-চুলো সংঘ। ভদ্রলোকের নিজের মাথার চুল লাল ছিল বলে লন্ডনের সব লাল-চুলোদের জন্যে দরদ উথলে উঠেছিল। সামান্য গতর খাটিয়ে যাতে তারা দু-পয়সা পকেটে পায় সেই ব্যবস্থা করেছিলেন। টাকাটা দেওয়া হয় তার সম্পত্তির সুদ থেকে। দরখাস্ত করলেই চাকরিটা পাওয়া যাবে।"
"শুনে তো চক্ষু স্থির হয়ে গেল আমার, “সেকী! লাখে লাখে লাল- চুলো দরখাস্ত নিয়ে ছুটবে যে "
স্পলডিং বললে, "মোটেই না। প্রথম কথা বয়স কম হলে চলবে না। তারপর লন্ডনের বাসিন্দা হওয়া চাই— কেননা ব্যাবসা করে টাকা কামিয়েছিলেন তিনি এখান থেকেই। তার চেয়েও বড়ো কথা হল, চুলের রং শুধু লাল হলেই চলবে না— আগুনরাঙা হওয়া চাই- ঠিক আপনার চুলের মতো। দরখাস্ত করলেই কিন্তু পেয়ে যাবেন কাজটা মনে করেন।”
33/292
'দেখলাম, অনেক খবরই রাখে স্পলডিং। কথাটাও মন্দ বলেনি। আমার চুলের রংখানা দেখেছেন? ঠিক যেন আগুন। কাজেই সেদিন দোকান বন্ধ করে বেরিয়ে পড়লাম ওকে নিয়ে। "গিয়ে মুণ্ডু ঘুরে গেল কাতারে কাতারে লাল-চুলো মানুষ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। তবে হ্যাঁ, আমার মতো আগুন রাঙা চুল কারোরই নেই। যেদিকে দু-চোখ যায় কেবল লাল মাথা। এরই মধ্যে দিয়ে আশ্চর্য কৌশলে স্পলডিং আমাকে টেনে নিয়ে গেল সিঁড়ি বেয়ে অফিস ঘরের সামনে। সিঁড়িতেও লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল লাল- চুলোরা— কেউ কেউ মুখ কালো করে নেমে আসছে চাকরি না পাওয়ায়। "অফিস ঘরে ঢুকে একজন লাল-চুলোকে টেবিল চেয়ার নিয়ে বসে
থাকতে দেখলাম। আমার চাইতেও রাঙা চুল। প্রার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে
তৎক্ষণাৎ নাকচ করছে দেখে মনটা দমে গেল। কিন্তু আমার পালা আসতে বুকটা নেচে উঠল আমার প্রতি তার পছন্দ ভরা চাহনি দেখে। উঠে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে ঘাড় কাত করে বেশ করে দেখল আমাকে। দু-চারটে কথা জিজ্ঞেস করার পর এসে দাঁড়াল আমার সামনে। তারপর আচমকা আমার চুল খামচে ধরে এমন হ্যাচকা টান মারল যে চেঁচিয়ে মেঁচিয়ে চোখে জল এনে ফেললাম। ভদ্রলোক লজ্জিত হয়ে বললে, “কিছু
মনে করবেন না— নকল চুল কিনা দেখে নিলাম। দু-বার ঠকেছি
কিনা— রং করা চুল নিয়েও এসেছে অনেকে। " 'এই বলে জানলার সামনে নিয়ে হেকে বললে, “লোক পাওয়া গেছে— চাকরি আর খালি নেই।” হতাশ হয়ে সরে পড়ল লাল-চুলোরা। ‘ভদ্রলোক বলল, “আমি এখানকার ম্যানেজার। নাম ডানকান রস।
আপনি কী করেন ? 'সামান্য একটা ব্যাবসা, বললাম আমি।
স্পলডিং বলে উঠল, "সে-কাজ আমি আপনার হয়ে করে দিতে
পারব, মি. উইলসন। 'এখানকার কাজ ক-টায় ?"
দশটা থেকে দুটো। 'ভেবে দেখলাম, বন্ধকি কারবার চলে সাধারণত সন্ধের দিকে— সকালের দিকে আমার কোনো কাজই নেই। সেই ফাঁকে বাড়তি পয়সা স্বচ্ছন্দে রোজগার করতে পারব। ব্যাবসাটা স্পলডিং দেখতে পারবে।
'বললাম, "আমি রাজি। কত মাইনে?”
'হপ্তায় চার পাউন্ড।'
'কাজটা কী?'
'খুবই সামান্য। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা দেখে স্রেফ নকল করে যাওয়া। কালি কলম কাগজ সব আপনি নিয়ে আসবেন। কিন্তু ঘর ছেড়ে একদম বেরোতে পারবেন না— কোনো অছিলাতেই নয়— অসুখবিসুখ বা হঠাৎ কাজের চাপেও ডুব মারা চলবে না— তাহলেই জানবেন চাকরিটা যাবে। শর্তটা পরিষ্কারভাবে লেখা আছে উইলে। বলুন, পারবেন কাল থেকে আসতে?"
"হ্যাঁ, হ্যাঁ।'
'বিদায় জানিয়ে স্পলডিংকে নিয়ে আনন্দে প্রায় নাচতে নাচতে বাড়ি ফিরে এলাম আমি। বাড়ি ফিরে কিন্তু সাত পাঁচ ভাবতে গিয়ে মনটা আবার মুষড়ে পড়ল। জোচ্চোরের পাল্লায় পড়লাম কি? সামান্য এই কাজের জন্য এত টাকা কেউ দেয়? স্পলডিং অবশ্য সমানে উৎসাহ জুগিয়ে চলল আমাকে।
‘পরের দিন কাগজ কলম কালি নিয়ে গেলাম" সংঘের দপ্তরে। ডানকান রস হাজির ছিল। আমাকে 'A' অক্ষর থেকে শব্দকোষ কপি করতে বসিয়ে বেরিয়ে গেল। কিন্তু মাঝে মাঝে এসে দেখে গেল ঠিকঠাক কাজ করছি কি না। ছুটি দিল ঠিক দুটা ের সময়।
“শনিবারে পেলাম চারটে পাউন্ড। একদিনের জন্যেও কামাই না- করে প্রতিদিন দশটা থেকে দুটো হাজিরা নিয়ে চললাম দপ্তরে। ডানকান রস ক্রমশ আসা কমিয়ে ছিল। রোজ একবার আসাও শেষকালে বন্ধ হয়ে গেল। আমি কিন্তু প্রতিদিন দশটা থেকে দুটা েপর্যন্ত নকলনবিশি চলিয়ে গেলাম স্রেফ টাকার লোভে। কী জানি বাবা, একদিন না এলে যদি টাকাটা খোয়া যায়। এইভাবে গেল আটটা সপ্তাহ। A প্রায় শেষ করে এনেছিলাম। এমন সময়ে আচমকা শেষ হয়ে গেল ব্যাপারটা।
আজ সকালে কাজে গিয়ে দেখি দরজায় তালা দেওয়া। এই পিচবোর্ডটা ঝুলছে পাল্লায়।
চৌকানা একটা পিচবোর্ড এগিয়ে দিলেন জাবেজ উইলসন। আকারে নোটবইয়ের চাইতে বড়ো নয়। তাতে লেখা :
লাল-চুলো সংঘ
অক্টোবর ৯, ১৮৯০
জাবেজ উইলসনের মুখের চেহারা দেখেই আমি আর হোমস কেউই হাসি সামলাতে পারলাম না। যাকে বলে অট্টহাসি, তাই হেসে উঠলাম। একে তো ওইরকম লাল চুল ভদ্রলোকের, তার ওপর আমাদের ছাদ কাঁপানো অট্টহাসি শুনে যেন আরও লাল হয়ে গেল চুলের গোড়া পর্যন্ত। চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে রক্তিম মুখে বললেন, ঠিক আছে, আমি যাচ্ছি, আমার দুর্দৈব দেখে এত মজা পাবেন আপনারা বুঝিনি।
হাত ধরে টেনে বসিয়ে দিল হোমস। বলল, “আপনার কেস আমি নিলাম।- দরজায় এই পিচবোর্ডটা দেখবার পর কী করলেন এবার বলুন!” ‘নীচের তলায় বাড়িওয়ালা থাকেন। তার কাছে গিয়ে রক্তকেশ
সংঘের নাম করতে তিনি তো আকাশ থেকে পড়লেন। ডানকান রস নামটাও নাকি জীবনে শোনেননি। কিন্তু লাল-চুলো চেহারার বিবরণ দিতেই চিনলেন। বললেন, 'সলিসিটর-এ ভদ্রলোকের কথা বলছেন তো? ওঁর নাম তো উইলিয়াম মরিস। নিজের অফিস গুছোনো না-হওয়া পর্যন্ত আমার অফিসে ছিলেন। কালকেই চলে গেছেন। ১৭ নম্বর কিং এডওয়ার্ড স্ট্রিটের অফিসে গেলেই দেখা পাবেন।
'গেলাম সেখানে। গিয়ে আবার বোকা বনলাম। ঠিকানায় একটা কারখানা আছে। উইলিয়াম মরিস বা ডানকান রসের নামও কেউ শোনেনি। বাড়ি ফিরে স্পলডিংকে সব বললাম। ও বললে, দেখাই যাক না দু-দিন সবুর করে। নিশ্চয় চিঠিতে খবর আসবে। কিন্তু তাতে আমার কী লাভ বলুন ? চাকরিটা তো আর পাব না। তাই ভাবলাম আপনার বুদ্ধি নিতে আসি— গরিব দুঃখীদের অনেক সাহায্য আপনি করেন জানি।' * 'বেশ করেছেন। ব্যাপারটা কিন্তু যত সহজ ভাবছেন তত সহজ
নয়। বেশ গুরুত্ব আছে।'
'তা তো আছেই। হস্তায় চার পাউন্ড কি চাট্টিখানি কথা। কিন্তু কথা হচ্ছে আমার পেছনে বত্রিশটা পাউন্ড খরচ করে এই ঠাট্টাটা করার কী দরকার ছিল?'
স্পলডিং লোকটা আপনার কাছে কদিন কাজ করছে?
'মাসখানেক?
'ওকে কাজে নিলেন কীভাবে?
"বিজ্ঞাপন নিয়েছিলাম। অনেকেই এসেছিল। ওর চাহিদা দেখলাম
সবচেয়ে কম।
‘সস্তায় কিস্তি মেরেছেন বলতে পারেন। চেহারা কীরকম স্পলডিংয়ের?'
38/292
'মাথায় খাটো, গাটাগোট্টা। তড়বড়ে। পরিষ্কার গাল
তিরিশ। কপালে একটা সাদা দাগ অ্যাসিডে পুড়ে গিয়েছিল। সিধে হয়ে বসল হোমস। কণ্ঠস্বরে প্রকাশ পেল উত্তেজনা, ঠিক ধরেছি। দু-কানের লতিতে কি ফুটা আছে?
"আছে। ছেলেবেলায় নাকি একজন বেদে জোর করে কান বিধিয়ে
দিয়েছিল।'
গম্ভীর হয়ে গেল হোমস, 'এখন সে কোথায়?
'আমারই ডেরায়।'
'হুম। আজ শনিবার। আশা করছি সোমবারের মধ্যেই কিছু একটা
করতে পারব।
বিদেয় হলেন জাবেজ উইলসন। হোমস বললে, ‘ওয়াটসন, কী বুঝলে বলো।'
“কিচ্ছু না। দারুণ ধোঁয়াটে।'
'যে-মামলা বেশি ধোঁয়াটে মনে হয়, তাতেই বরং ধোঁয়া কম থাকে।
কিন্তু যা একেবারেই সাদাসিদে, রহস্য তাতেই বেশি।' 'মতলব কী তোমার?"
‘আপাতত তামাক খাওয়া। পরপর তিন পাইপ তামাক না-খাওয়া পর্যন্ত একদম কথা বলব না। বলে চেয়ারের ওপর পা তুলে পাইপ কামড়ে কুণ্ডলী পাকিয়ে বসে রইল অনেকক্ষণ। ভাবলাম বুঝি ঘুমিয়ে পড়ল। ঢুলুনি আমারও এল। তারপরেই চমকে উঠলাম ওর লাফিয়ে ওঠায়।
পাইপ নামিয়ে বললে, 'চলো, ঘণ্টা কয়েক সেন্ট জেমস হলে বাজনা শুনে আসা যাক। সময় হবে?
"নিশ্চয়
তবে চলো। বেরিয়ে পড়া যাক। প্রোগ্রামে দেখছি অবশ্য জার্মান বাজনাই বেশি। ফরাসি বা ইটালিয়ান বাজনার চেয়ে ভালো। নিজেকে হারিয়ে ফেলা যায় এখন যা দরকার।