Shojirul123 Subscriber 2 years ago |
যৌবনের ইবাদত সবচেয়ে দামি
মহান আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং দিয়েছেন বৈচিত্র্যময় জীবন; যে জীবন পরিবর্তনশীল। ধাপে ধাপে পরিবর্তিত হয় জীবনের আয়ুষ্কাল। প্রথমে শিশু হয়ে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ; তারপর শিশুকাল থেকে শৈশব, কৈশোর, যৌবন, বৃদ্ধ এভাবেই পরিবর্তন ঘটে মানুষের জীবনের। একেক সময়ের জীবনধারা একেক রকম। শিশুকালে মা-বাবার ওপরই নির্ভর থাকে। এরপর শৈশব, কৈশোরে আস্তে আস্তে বুঝতে শেখে। নিজেকে নিজে একটু হলেও সামলাতে সক্ষম হয়। এভাবেই যখন যৌবনে পদার্পণ করে, তখন মানুষ হয়ে ওঠে উদ্যমী, সাহসী, তেজস্বী, বলীয়ান সুঠাম দেহের অধিকারী। মানুষের জীবনের সূচনা থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত যে অবস্থার রূপান্তর ঘটে তা পবিত্র কোরআনে সুন্দরভাবে চিত্রিত হয়েছে। কোরআনে এসেছে, ‘আল্লাহ ওই সত্ত্বা, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেন দুর্বল অবস্থায়। অনন্তর সে দুর্বলতার পর দান করেন শক্তিমত্তা। ফের সে শক্তিমত্তার পর দান করেন দুর্বলতা ও বার্ধক্য। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং তিনি সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান।’ (সুরা রূম : ৫৪)
যৌবনকাল জীবনের সোনালি অধ্যায়। যৌবনই নিজেকে পরিপাটি করে সাজানোর উপযুক্ত সময়। যৌবন বয়সে দেহ ও মন দুটোই শক্তিশালী, টগবগে থাকে। অন্যরকম উত্তেজনা, উদ্যম ও প্রবাহ থাকে। এই প্রবল শক্তিমত্তা মানুষকে ভালো ও মন্দ দুদিকেই ধাবিত করতে পারে। এই শক্তিমত্তাকে যে ভালোর দিকে নেয়, সে হয় উত্তম চরিত্রের অধিকারী, ন্যায়, নীতি ও আদর্শের বলে বলীয়ান। অন্যদিকে যে মন্দের দিকে নেয়, সে হয় মন্দ চরিত্রের অধিকারী, ঘৃণিত, নিন্দিত ও জঘন্য ব্যক্তি। আল্লাহ মানুষকে এ উভয় শক্তি দিয়েছে। এ সময়ে যে যত ভালো কাজ করতে পারবে, আমলনামা তত ভারী হবে। একজন যুবক একটানা দুই ঘণ্টা রাস্তায় হাঁটতে পারলেও একজন বৃদ্ধ সেটি পারবে না। কারণ যুবকের শরীর শক্তিশালী, তার শক্তিও অনেক। কিন্তু বৃদ্ধের শরীরে শক্তি কম, তিনি হাতে-পায়ে ঠিকমতো শক্তি পান না। তা হলে কীভাবে একটানা দুই ঘণ্টা হাঁটবেন তিনি?
বৃদ্ধ বয়সে মসজিদে পড়ে থাকলেও তার ইবাদত কবুলের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি। কিন্তু যুবক বয়সে মসজিদে গেলেই রয়েছে পুরস্কারের ঘোষণা। একজন বৃদ্ধের ইবাদতের চেয়ে আল্লাহ বেশি খুশি হন যেসব তরুণ-তরুণী যৌবন বয়সে আল্লাহর ইবাদতে লিপ্ত থাকে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তিনি (মুসা আ.) যখন পূর্ণ যৌবনে পৌঁছেছিলেন, তখন তাকে প্রজ্ঞা ও ব্যুৎপত্তি দান করলাম।’ (সুরা কাসাস : ১৪)। আসহাবে কাহাফের সাত ব্যক্তিও ছিল যুবক। যারা এক আল্লাহ ইবাদতে বিশ^াসী ছিলেন। যাদেরকে শত্রুর হাত থেকে আল্লাহ তায়ালা রক্ষা করেছিলেন। আল্লাহ বলেন, যখন যুবকেরা পাহাড়ে আশ্রয় গ্রহণ করে তখন দোয়া করে, ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে আপনার পক্ষ থেকে রহমত দান করুন এবং আমাদের কাজকে সঠিকভাবে পরিচালনা করুন।’ (সুরা কাহাফ : ১০)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘হে রাসুল! আপনার কাছে তাদের ইতিবৃত্ত সঠিকভাবে বর্ণনা করেছি। তারা ছিল কয়েকজন যুবক। তারা তাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ^াস স্থাপন করেছিল এবং আমি তাদের সৎ পথে চলার শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছিলাম।’ (সুরা কাহাফ : ১৩)
যৌবনকাল আল্লাহর বড় নিয়ামত। তিনি যুবকদের ভালোবাসেন। যুবকদের তার ইবাদতের পথে ডাকেন। কিন্তু সবাই তার এ ডাক শুনতে পায় না। তাই সবাই এ ডাকের সাড়াও দেয় না। যারা যৌবনকালে বিপদগ্রস্ত হয়, আল্লাহকে বেমালুম ভুলে পাপকাজে লিপ্ত থাকে, তাদের জন্যও আল্লাহর অফুরন্ত দয়া থাকে। আল্লাহ তাদের হতাশাগ্রস্ত হতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘হে রাসুল! আপনি বলুন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছো, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমামীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা
যুমার : ৫৩)
যুবক বয়সে মানুষ ইবাদত-বন্দেগি ভুলে অর্থ, বিত্ত, ক্যারিয়ারের মোহে অন্ধ থাকে। একজন মুসলিম হিসেবে তার যে কিছু দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে। সেগুলো সে বলে ভুলে যায়। দুনিয়াবী সুখের ফাঁদে পড়ে তলিয়ে যায় পাপের অতল গহ্বরে। আল্লাহ এদেরকে ইবাদতমুখী করতে কোরআন-হাদিসে বারবার ইঙ্গিত করেছেন। যৌবনকালের ইবাদত আল্লাহর অতিশয় প্রিয়। বান্দা ডাকা মাত্রই তিনি তার জবাব দেন, নিমিষে পূরণ করে দেন সব চাওয়া-পাওয়া।
প্রিয়নবী (সা.) বলেছেন, ‘সাত শ্রেণির মানুষকে কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তার আরশের তলে আশ্রয় দেবেন। এর মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষ হলো সেসব যুবক-যুবতী; যারা তার রবের ইবাদতের মধ্যদিয়ে যৌবন অতিবাহিত করেছে।’ (বুখারি : ৬৬০)। প্রিয়নবী (সা.) আরও বলেন, ‘কেয়ামতের দিন পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ব্যতীত মানুষকে এক কদম নড়তে দেওয়া হবে না; তার মধ্যে একটি হলোÑ সে তার যৌবনকাল কোন কাজে ব্যয় করেছে।’ (তিরমিজি : ২৪১৬)। প্রিয়নবীর হাদিস মোতাবেক, আল্লাহ জানতে চাইবেন, হে যুবক! যৌবনে তুমি কি মসজিদে গিয়েছো নাকি সিনেমা হলে গিয়েছো? তুমি কি নামাজ পড়েছো নাকি খেলাধুলা, নাচ-গানে মত্ত ছিলে? তুমি কি যৌবনে দাড়ি রেখেছিলে নাকি দাড়ি কেটে সুপারস্টার নায়কদের মডেল হয়েছিলে? অন্য হাদিসে তিনি পাঁচটি অবস্থার পূর্বে পাঁচটি অবস্থাকে মর্যাদা দেওয়ার কথা বলেছেন। তার মধ্যে একটি হলোÑ ‘তোমরা বার্ধক্যের আগে যৌবনকে মর্যাদা দাও।’ (বায়হাকি : ১০২৪৮)
আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে যত নবী পাঠিয়েছেন সবাইকে যৌবন বয়সেই নবুয়ত দিয়েছেন। যৌবনের উদ্যম ও শক্তিমত্তার সঙ্গে তারা মানুষের ঘরে ঘরে ছড়িয়ে দিয়েছেন দ্বীনের দাওয়াত। যুবকরাই পারে একটি সমাজ, রাষ্ট্র বা দেশের পরিবর্তন ঘটাতে। এজন্য দরকার তাদের সঠিক পরিচর্যা। ছোটবেলা থেকেই আদর্শের সঙ্গে গড়ে তোলা। ইসলামের নূরানী আলোয় তাদের আলোকিত করা। তা হলেই তারা দেশ ও জাতির কল্যাণ বয়ে আনতে পারবে তারা। ইসলামের আলোকরশ্মিতে আলোকিত করতে পারবে ইহকাল ও পরকাল।
Alert message goes here