Saidur Trainer 2 years ago |
তরমুজ খাওয়ার সময় ভুলে একটি বা দুটি বীজ গিলে ফেলা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। তবে তরমুজের বীজ গিলে ফেলার পর অনেকেই দুশ্চিন্তায় পড়ে যান এই ভেবে যে, পেটে কোনো সমস্যা হবে না তো!
আসলে তরমুজের বীজ খেয়ে ফেললে কোনো ক্ষতি নেই বরং আপনার লাভ হবে। এমন অনেক জিনিস আছে যা শরীরের জন্য ভালো হলেও আমরা ফেলে দিই। তরমুজের বীজও ঠিক তেমনই উপকারী একটি খাবার।
আমেরিকার কৃষি দপ্তর পরামর্শ দিচ্ছে, তরমুজের বীজ না ফেলে বরং সেগুলো একসঙ্গে করে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে রেখে দিন ও বাদামের মকো স্ন্যাকস হিসেবে খান।
তরমুজের বীজ খেলে শরীরে কী ঘটে
তরমুজের বীজে উচ্চমাত্রায় প্রোটিন থাকে। দিনে যে পরিমাণ প্রোটিনের প্রয়োজন হয়, তার ৬০ শতাংশ পাওয়া যায় এক কাপ তরমুজের দানায়। এছাড়া শরীরের প্রয়োজনীয় নানা ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিডও আছে এ বীজে।
তার মধ্যে একটি হলো আর্গিনাইন, যা উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনারি হার্ট ডিজিজের চিকিৎসায় এটি বেশ উপকারী। এছাড়া গ্লুটামিক অ্যাসিড, লাইসিন, ট্রিপ্টোফানের মতো প্রোটিনও থাকে তরমুজের বীজে।
তরমুজের বীজে আরও পাওয়া ভিটামিন বি। আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির রিপোর্ট থেকে জানা যায়, খাবারকে অ্যানার্জিতে পরিণত করতে সাহায্য করে ভিটামিন বি।
নিয়াসিনের মতো জরুরি ভিটামিন বি মেলে তরমুজের বীজে। যার কাজ হলো স্নায়ুতন্ত্র ও পরিপাকতন্ত্রকে রক্ষণাবেক্ষণ করা। এমনকি ত্বক ঠিক রাখতেও নিয়াসিন জরুরি। এতে আরও আছে থিয়ামিন, রাইবোফ্লাবিন, ভিটামিন বি৬।
এছাড়া তরমুজের বীজে থাকে ম্যাগনেসিয়াম। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, ম্যাগনেসিয়াম ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়া কার্বোহাইড্রেট হজমেও ভূমিকা রাখে।
ব্ল্যাড সুগারের সমস্যা এড়াতে তরমুজের বীজ খেতে পারেন নিয়মিত। এ ছাড়া এ বীজে ফসফরাস, আয়রন, পটাসিয়াম, সোডিয়াম, কপার, ম্যাঙ্গানিজ ও জিংক আছে।
এককাপ শুকনো তরমুজের বীজে থাকে ৫১ গ্রাম ফ্যাট। যার মধ্যে ১১ শতাংশই হলো স্যাচুরেটেড ফ্যাট। বাকিটা পলিস্যাচুরেটেড, মনোস্যাচুরেটেড ও ওমেগা ৬ ফ্যাটি অ্যাসিড।
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, মনো ও পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। ওমেগা ৬ ফ্যাটি অ্যাসিড আবার উচ্চরক্তচাপও নিয়ন্ত্রণ করে।
এ বীজে কিন্তু ক্যালোরির পরিমাণ বেশি। এক কাপ তরমুজের শুকনো বীজে থাকে ৬০০ ক্যালোরি। তাই বুঝে-শুনে খাওয়া উচিত।
তরমুজের বীজ হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও সাহায্য করে। এই বীজে মনোস্যাচুরেটেড ও পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে।
যা রক্তপ্রবাহে এলডিএল কোলেস্টেরল বা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। যাদের উচ্চরক্তচাপের সমস্যা আছে, তাদের জন্য তরমুজের বীজ অনেক উপকারী।
এমনকি তরমুজের বীজে অনেক বেশি অ্যামিনো অ্যাসিড এল-আরজিনাইন থাকে। গবেষকদের দাবি, এল-আরজিনাইন দেহে নাইট্রিক অক্সাইডের মাত্রা বাড়ায়।
কীভাবে খাবেন তরমুজের বীজ?
তরমুজের বীজ ভেজে খেতে পারেন। স্বাদ বাড়াতে এর সঙ্গে সামান্য গোলমরিচের গুঁড়া, লবণ ও জলপাই তেল দিয়েও ভেজে খেতে পারেন।
এছাড়া ভাজা বীজগুলো সালাদ, টকদই কিংবা ওটসের সঙ্গে মিশিয়েও খেতে পারেন। এমনকি বীজগুলো ভেজে গুঁড়া করে পানিতে গুলিয়েও খেতে পারেন।
তবে কাঁচা বীজ বেশি না খাওয়াই ভালো, এতে করে হজমে সমস্যা হতে পারে। আর শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা থাকলে তরমুজের বীজ খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
Alert message goes here